অধ্যায়-০৪ঃ বাংলাদেশের অন্যান্য কর।
🔳 প্রশ্ন-০১ঃ মূল্য সংযোজন করের সংজ্ঞা Definition of Value Added Tax (VAT)
মূল্য সংযোজন কর বা মূসক হলো একটি পরোক্ষ কর। সরবরাহকৃত পণ্য বা সেবার উপর প্রদেয় করের বিপরীতে উপকরণ কর সমন্বয় পূর্বক আরোপিত করই ঐ পণ্য বা সেবার মূল্য সংযোজন কর বা মূসক। সহজ ভাষায় কোন উৎপাদিত পণ্য বা সেবার সংযোজিত মূল্যের উপর যে কর প্রদান করা হয় তাকে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা Value Added Tax বা VAT বলে।
অর্থাৎ মোট উৎপাদিত পণ্য বা সেবার মূল্যের উপর নির্দিষ্ট হারে আরোপিত কর হতে মোট উপকরণ মূল্যের উপর নির্দিষ্ট হারে আরোপিত করের বিয়োগফল হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক।
ভ্যাট আইন এর আর্টিকেল ২ এ বলা হয়েছে “Value Added Tax is calculates on the price of goods and services of the rate applicable to such goods or services and shall be chargeable after deduction of the amount of value added borne directly by various cost components” উৎপাদিত পণ্য বা সেবার মূল্য হতে উপকরণের মূল্য বাদ দিলে যেসংযোজিত মূল্য পাওয়া যায় তাকে নির্দিষ্টকর হারে গুণ করে মূল্য সংযোজন কর নির্ণয় করা হয়।
Prof. Carl S. Shop (1990) ভ্যাটের সংজ্ঞা সম্পর্কে বলেন, “A tax on value added by a business firm, through its own activity, to the goods and services it buys from other business firms”. মূল্যসংযোজন হচ্ছে উৎপাদক বা আমদানিকারক বা বিক্রেতা উৎপাদন মূল্য, আমদানি মূল্য বা ক্রয় মূল্যের সাথে যে মূল্য যুক্ত করে বিক্রি করে তাকে বুঝায়। এই সংযোজিত মূল্যের উপর যে কর প্রদান করা হয় তাকে মূল্য সংযোজন কর বলে।
কোনো কোনো দেশে এ কর ব্যবস্থা Goods and Service Tax (GST) নামেও পরিচিতি।
🔳 প্রশ্ন-০২ঃ মূল্য সংযোজন করের হার Rates of VAT
মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থায় সকল পণ্য ও সেবার ওপর একটি একক করহার প্রযোজ্য। বাংলাদেশে এ হার ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আয়কর আইন অনুযাযী মূল্য সংযোজন করের ক্ষেত্রবিশেষে তার পার্থক্য আছেঃ
(১) রপ্তানিকৃত বলে গণ্য পণ্য সরবরাহ বা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে শূন্য শতাংশ (০%) মূসক প্রযোজ্য।
(২) করযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে (১৫%) মূসক প্রযোজ্য।
(৩) কিছু কিছু পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে হ্রাস কৃত ৬ টি হার প্রযোজ্য হয়ে থাকে –
যেমন: – ২%, ২.৪%, ৪.৫%, ৫%, ৭.৫% এবং ১০% এই ৬টি হ্রাসকৃত হার প্রযোজ্য ।
🔳 প্রশ্ন-০৩ঃ মূল্য সংযোজন কর নির্ণয়ের সূত্র সমূহঃ
♦️ আঞ্চলিক কাচামালের উপর নির্ভর ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ( কাচামালে ভ্যাট না যুক্ত থাকলে )
(১) মূসক = ( বিক্রয় মূল্য – উপকরণ মূল্য )x ১৫% { প্রত্যক্ষ বিয়োজন পদ্ধতি }
♦️ আমদানি নির্ভর কাচামালের ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ( কাচামাল ১৫% ভ্যাটের আওতায় থাকলে )
(২) মূসক = ( বিক্রয় মূল্য )১৫% – ( উপকরণ মূল্য )x ১৫%{ পরোক্ষ বিয়োজন পদ্ধতি }
♦️ আমদানি নির্ভর কাচামালের ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ( কাচামালে ১৫% ভ্যাট যুক্ত ক্রয় থাকলে )
(৩) মূসক = ( বিক্রয় মূল্য/১১৫)১৫ – ( উপকরণ মূল্য/১১৫)১৫ { ভ্যাট যুক্ত ক্রয় }
♦️ ক্রয়-বিক্রয়কারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ( ১৫% ভ্যাট সহ ক্রয় উল্লেখ না থাকলে )
(৪) মূসক = ( বিক্রয় মূল্য – ক্রয় মূল্য)১৫% { ভ্যাট যুক্ত ক্রয় না থাকলে }
♦️ ক্রয়-বিক্রয়কারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ( ১৫% ভ্যাট সহ ক্রয় উল্লেখ থাকলে )
(৫) মূসক = ( বিক্রয় মূল্য/১১৫)১৫ – (ক্রয় মূল্য/১১৫)১৫ { ভ্যাট যুক্ত ক্রয় থাকলে }
♦️ ক্রয়-বিক্রয়কারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ( সংযোজিত মূল্য থাকলে )
(৬) মূসক = ( সংযোজিত মূল্য )১৫% { সংযোজিত মূল্য থাকলে }
♦️ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ( মূসক আরোপন যোগ্য মূল্য )
(৭) মূসক = ( মূসক আরোপন যোগ্য মূল্য )১৫% { আরোপনযোগ্য মূল্য থাকলে }
♦️ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ( বিক্রয় মূল্য )
(৮) মূসক = ( বিক্রয় মূল্য/১১৫ )১৫ { শুধু বিক্রয় মূল্য থাকলে }
🔳 প্রশ্ন-০৪ঃ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করের বৈশিষ্ট্য।
ভ্যাট হলো সংযোজিত মূল্যের উপর একটি কর ব্যবস্থা। ভ্যাটের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
১। করের প্রকৃতি (Nature of tax) :
এটি একটি পরোক্ষ কর যা সংযোজিত মূল্যের উপর ধার্য করা হয়। মূল্য সংযোজন কর বা মূসক ব্যবস্থা আমদানি পণ্যের বিক্রয় কর এবং বেশিরভাগ দেশজ উৎপাদিত পণ্যের উপর আবগারী করকে প্রতিস্থাপিত করবে অর্থাৎ এ কর উপরিউক্ত দুটি করের সংমিশ্রণে একটি একীভূত কর।
২। উপকরণ কররেয়াত ব্যবস্থা (Input tax exempted system):
উপকরণ কররেয়াত ব্যবস্থা ভ্যাট ব্যবস্থায় বিদ্যমান। অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পূর্বে ও পরে উপকরণ কররেয়াত ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে অর্থনৈতিক কাক্রমের প্রতিটি স্তরে শুধুমাত্র মূল্যসংযোজনের উপর ভ্যাট পরিশোধ করা হয়। সর্বশেষ ভোক্তার উপর ভ্যাট আপতিত হয়।
৩। একক কর হার (Single rate system):
ভ্যাট হলো একক কর হার বিশিষ্ট কর ব্যবস্থা। বাংলাদেশে এর আদর্শ কর হার ১৫%।
৪। রপ্তানির উপর শূন্য হার (Zero rate of export goods):
ভ্যাট ব্যবস্থায় রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য রপ্তানির উপর কর হার শূন্য (0%) করা হয়েছে।
৫। পূর্বকরের প্রতিস্থাপন (Replace on previous tax) :
ভ্যাট মূলতঃ আমদানীকৃত পণ্যের উপর আরোপিত ও দেশীয় পণ্যের উপর আরোপিত আবগারি শুল্ককে প্রতিস্থাপিত করেছে।
৬। করের ভিত্তি (Basis of tax):
কতিপয় বিলাস সামগ্রীর উপর সম্পূরক কর ধার্যসহ মূল্য সংযোজন কর আমদানি, উৎপাদন ও কতিপয় সেবার ক্ষেত্রে সীমিত রাখা হয়েছে।
৭। করের হার (Rate of tax):
বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্য ব্যতীত মূসক এর আওতাভুক্ত সব পণ্য ও সেবার মূল্যের ১৫% হারে ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে। ভ্যাটের একটি আদর্শ হার থাকার কারণে এটি প্রশাসনিকভাবে বাস্তবায়ন সহজ হয়।
৮। কর অব্যহতি (Tax exempted):
বর্তমানে সকল রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে “শুন্য হার” মূসক ধার্য করা হয়েছে, ফলে রপ্তানি পণ্যে ব্যবহৃত উপকরণের উপর প্রদত্ত মূসক বা ভ্যাট ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে দেশে সরবরাহ কৃত পণ্য বা সেবা এবং বিদেশগামী যানবাহনে সরবরাহকৃত খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রিকর ক্ষেত্রে “শুন্য হার” প্রযোজ্য হবে।
৯। আওতা বহির্ভূত (Tax excluded) :
প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকৃত সকল কৃষি পণ্য, এলুমিনিয়ামের তৈরি তৈজসপত্র, কার্টুনস, সিনথেটিক কটন, বলপেন, এবং আমদানিকৃত শিল্প সামগ্রীকে মূসক বা ভ্যাট এর আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে।
১০। টানওভার কর (Turnover tax) :
অর্থ আইন ২০১৯ অনুযায়ী কুটির শিল্প যাদের বার্ষিক টার্নওভার (বিক্রয়) ৩ কোটি টাকার কম সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে মূসক এর আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে। তারা ৪% টার্নওভার কর প্রদান করবে।
১১। বাধ্যতামূলক কর ব্যবস্থা (Compulsory payment):
নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রদান বাধ্যতামূলক। কিন্তু ব্যক্তির উপর নয়।
১২। কর পরিশোধ (Tax payment):
ভ্যাট মাসিক, ত্রৈমাসিক, সান্মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ্য ।
🔳 প্রশ্ন-০৫ঃ মূল্য সংযোজন করের বিভিন্ন ধরন বা আওতা
মূল্য সংযোজন কর চার ধরনের হয়ে থাকে, যথা
১। মূল্য সংযোজন কর (VAT)
২। টার্নওভার কর (Turn over Tax)
৩। সম্পূরক কর ( Supplementary duty)
৪। অগ্রিম কর (Advanced duty)
১। মূল্য সংযোজন কর (VAT):
উৎপাদনকারি, সেবাপ্রদানকারি, বা আমদানি কারক যাদের বার্ষিক বিক্রয় ৩ কোটি টাকা বা তার অধিক তারা মূল্য সংযোজনের উপর ১৫% হারে মূসক বা VAT প্রদান করবে।
২। টার্নওভার কর (Turn over Tax):
যে সব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার (বিক্রয়) ৫০ লক্ষ টাকা হতে ৩ কোটি টাকার কম তারা মূসক এর পরিবর্তে ৪% হারে টার্নওভার কর প্রদান করবে।
৩। সম্পূরক কর (Supplementary Duty):
বিলাস সামগ্রীর আমদানি ও ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে এসব পণ্যের উপর মূসক ছাড়াও অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক ধার্য করে। অবশ্য বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্কের হারও ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই হার ১০% থেকে ৫০০% পর্যন্ত।
৪। অগ্রিম কর ব্যবস্থা (Advanced duty):
মূল্য সংযোজন কর আইন- অনুযায়ী আগাম করের বিধান রাখা হয়েছে। ৩১(২) ধারায় বলা হয়েছে করযোগ্য আমদানি মূল্যের ৪% হারে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫% হারে আগাম কর প্রদেয় হবে। অর্থাৎ আমদানি পর্যায়ে একই ভিত্তির উপর ভ্যাট ও আগাম ভ্যাট আরোপ করতে হবে।
🔳 প্রশ্ন-০৬ঃ মূল্য সংযোজন করের সুবিধা।
একটি দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও করের ভিত্তি সম্প্রসারণে করের সুবিধা নিম্নে উল্লে করা হলো:
(ক) সরকারের দিক থেকে সুবিধা (Advantage of VAT to Govt.):
সরকারের দিক থেকে ভ্যাটের গুরুত্ব বা সুবিধা অনেক। নিম্নে ভ্যাটের সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলোঃ
১। স্বচ্ছতা বৃদ্ধি (Increase of Transference ):
মূল্য সংযোজন কর প্রচলিত অন্যান্য করের তুলনায় অধিক স্বচ্ছ । কারণ এই ব্যবস্থার মূসক দাতা নিজ স্বার্থেই দলিল ও প্রমাণপত্র সংরক্ষণ করে থাকে।
২। জবাবদিহিতা বৃদ্ধি (Increase of Accountability):
মূসক এর আওতায় উপকরণ কর রেয়াতের জন্য কর কর্তৃপক্ষ প্রতি পরীক্ষা (Cross-Checking) এর ব্যবস্থা করতে পারে। ফলে স্বচ্ছলতা ও জবাবদিহিতা বাড়ে এবং রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পায়।
৩। উৎসাহ বৃদ্ধি (Increase of inspiration):
বাস্তবে মূসক পুনঃপৌনিক করের বিলোপ ঘটায় ফলে করদাতাগণ স্বেচ্ছায় কর প্রদানে উৎসাহিত হবে।
৪। রাজস্ব বৃদ্ধি (Increase of Revenue):
মূসক বা ভ্যাট দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। বর্তমানে কর রাজস্বের সিংহ ভাগ ভ্যাট থেকে আসে।
৫। মূসক বা ভ্যাট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর (Self- Enforcing):
মূল্য সংযোজন কর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হওয়ার ক্ষমতা রাখে। ফলে রাজস্ব আয় বাড়ে।
৬। উৎপাদন বাড়ানো (Increase of production):
দক্ষ মূসক বা ভ্যাট ব্যবস্থা দ্রব্য মূল্য কমাতে, উৎপাদন বাড়াতে ও অধিকপরিমাণে ভোগ্য পণ্য সরবরাহে সহায়ক।
৭। সুষম বণ্টন (Proper distribution):
মূসক বা ভ্যাট ব্যবস্থা করের ভিত্তি প্রসার করা সমজাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।
৮। কর ফাঁকি রোধ (Control of tax evasion):
মূসক স্তরে স্তরে আরোপ করা হয় এবং উপকরণ
(খ) করদাতার দিক থেকে সুবিধা (Advantage to tax payer):
১। পরোক্ষ কর (Indirect tax): এটি একটি পরোক্ষ কর যা করের বোঝা অন্যর উপর চাপানো যায়।
২। দায় এড়ানো (Avoidance of liability): এক্ষেত্রে কর দায় এড়ানো সম্ভব হয়।
৩। নিরপেক্ষতা (Neutrality): সকলকে সমান হারে কর দিতে হয় ফলে সাম্য ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।
৪। সরলতা (Simplicity): মূল্য সংযোজন কর অত্যন্ত সহজ ও সরল।
৫।পরিশোধ (Paid): পণ্য ক্রয়ের সাথে পরিশোধ করা হয় বলে করদাতা কোন বাড়তি চাপ অনুভব করে না।
৬। দ্বৈতকর পরিহার (Avoidance of duel tax): এ ব্যবস্থায় দ্বৈত কর পরিহার করা সম্ভব হয়।
🔳 প্রশ্ন-০৭ঃ মূল্য সংযোজন করের কুফল বা অসুবিধা
ভ্যাটের সফলতা নির্ভর করে শক্তিশালী কর কাঠামো ও দূর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ব্যবস্থার উপর। বাংলাদেশে মূসক ব্যবস্থা সফল হওয়ার সকল উপাদান উপস্থিত না থাকায় যে সকল সমস্যা বা অসুবিধা দেখা যায়ঃ
১। দ্রব্য ও সেবামূল্য বৃদ্ধি (Increase of price):
ভ্যাটের অজুহাত দেখিয়ে প্রায় সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। বাস্তবে এমন কতগুলো দ্রব্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে যেগুলো আদৌ ভ্যাটের আওতায় আসেনি। আবার যে সব দ্রব্য ও সেবার উপর মূসক বা ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে ভ্যাটের তুলনায় সে সব দ্রব্য ও সেবার মূল্য অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি (Increase of prediction cost):
পূর্বে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও কুটীর শিল্প করের বা আবগারি শুল্কের আওতায় ছিল না। বর্তমানে বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকার উর্ধ্বে হলে ১৫% হারে মূসক বা ভ্যাট ধার্য করা হয় এবং বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকার কম হলে ৪% টার্ন ওভার ট্যাক্স ধার্য করা হয়। ফলে এসব শিল্পে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বা কালো বাজারি পণ্যের সাথে এসব পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
৩। ভোক্তাদের অসুবিধা (Disadvantages of customer):
ভ্যাট আরোপের ফলে অস্বাভাবিক ভাবে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও যে সব পণ্য ও সেবা দ্রব্যের উপর ভ্যাট আরোপ করা হয়নি, ভ্যাটের দোহাই দিয়ে সেগুলোরও মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে নিম্ন আয় ও স্থির আয়ের ভোক্তাদের অসুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভোগ, হ্রাস পাচ্ছে এবং ভোক্তারা সবসময়ই উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
৪। বই ও হিসাব সংরক্ষণ (Recording problem):
ভ্যাটের আওতাভুক্ত ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন হিসাবের বই সংরক্ষণ করতে হচ্ছে এবং মাসিক রিপোর্ট মূসক বা ভ্যাট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে হচ্ছে। এটা অনেক ব্যবসায়ীর জন্য ঝামেলা পূর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রে খরচ সাপেক্ষ ও জটিল কর ব্যবস্থা।
৫। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি (Increase of living cost):
ভ্যাট পরোক্ষ কর হিসাবে এর চূড়ান্ত বোঝা ভোক্তারাই বহন করে থাকে ফলে ভোক্তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৬। কর ফাকি (Tax evasion):
এ ব্যবস্থায় মিথ্যা চালানপত্র প্রস্তুত করে কর ফাঁকি দিতে পারে।
৭। জটিল কর ব্যবস্থা:
এটি একটি জটিল কর ব্যবস্থা। এখানে কক্স চেকিং এর মাধ্যমে উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করে করদায় নির্ণয় করা হয়।
উপরোক্ত আলোচনার বলা যায়, কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবিধার তুলনায় তা নগণ্য। বিশেষকরে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহে এর বিকল্প পাওয়া কঠিন যার জন্য ভ্যাটের প্রসারতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
🔳 প্রশ্ন-০৮ঃ উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ বা সত্তা
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত মূল্যসংযোজন কর আইন অনুযায়ী নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গকে উৎসে ভ্যাট কর্তনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে যারা “উৎসে কর কর্তনকারী সত্তা” হিসেবে পরিচিত।
(ক) কোনো সরকারি সত্ত্বা;
(খ) এনজিও বিষয় ব্যুরো বা সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান;
(গ) ব্যাংক, বিমা কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান;
(ঘ) কোন মাধ্যমিক বা অনুরূপ তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান;
(ঙ) কোন লিমিটেড কোম্পানি।
উৎসে ভ্যাট কর্তনের বিধানাবলি ৪৯, ৫০, ৫৩ ধারায় বর্ণিত হয়েছে।
Related Video Course
-
🔷Taxation In Bangladesh বাংলাদেশে করবিধি ➡️ আয়বর্ষ ২০২৩-২০২৪ ➡️ করবর্ষ...