Course Content
একক ব্যাক্তির কর নির্ধারণ – Assessment of Individual
0/2
Taxation In Bangladesh
অধ্যায়-০৩ঃ  আয়কর পরিচিতি

🔳 প্রশ্ন-০১ঃ আয়ের সংজ্ঞা (Definition of Income)

আয় বলতে সাধারণত অর্জনকে বুঝায়, অর্থাৎ যা কিছু আসে সব কিছুই আয়। মোট ব্যয় থেকে মোট আয়ের আধিক্যই হল আয়, হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায়। আয় হল একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি সত্তা দ্বারা অর্জিত খরচ এবং সঞ্চয় সুযোগ, যা সাধারণত আর্থিক শর্তে প্রকাশ করা হয়। আয়কর আইনের আয়ের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই।

আয়কর আইন ২০২৩ এর দৃষ্টিতে আয়ের সংজ্ঞা আয়ঃ

আয় (income) ধারা -২(১৩): আয় এর সাথে নিম্ন লিখিত বিষয়াবলী অন্তভূক্ত হবেঃ

(ক) এই আইনের কোনো বিধানের অধীন কর আরোপণযোগ্য যেকোনো উৎস হইতে উদ্ভূত আয়, প্রাপ্তি, মুনাফা বা অর্জন।

(খ) এই আইনের কোনো বিধানের অধীন উৎসে কর্তন বা সংগ্রহযোগ্য যেকোনো পরিমাণ অর্থ।

(গ) উপ-দফা (ক) তে উল্লিখিত আয়, মুনাফা বা অর্জন সংশ্লিষ্ট কোনো ক্ষতি।

(ঘ) চতুর্থ তফসিল এর ৮ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ধার্যকৃত মিউচুয়াল ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক পরিচালিত কোনো বিমা ব্যবসা হইতে অর্জিত মুনাফা বা প্রাপ্তি।

(ঙ) এই আইনের যেকোনো বিধানের অধীন আয় হিসাবে গণ্য বা বিবেচিত যেকোনো অর্থ, অথবা বাংলাদেশে উদ্ভূত, সৃষ্ট বা প্রাপ্ত যেকোনো আয় অথবা উপচিত, উদ্ভূত, সৃষ্ট বা প্রাপ্ত হিসাবে বিবেচিত যেকোনো অর্থ।

(চ) কর আরোপ করা হয় এইরূপ যেকোনো পরিমাণ অর্থ, পরিশোধ বা লেনদেন।

আদালতের দৃষ্টিতে আয়ঃ

আদালত বিভিন্ন মামলার রায়ের মাধ্যমে আয়ের যে সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিয়েছে নিম্নে তার দু’টো উল্লেখ করা হলোঃ

(i) CIT vs Hinds Construction Ltd.(1972)

মামলার রায়ে বলা হয়েছে, “Income is what comes in from outside, No man can make a profit by dealing with himself” অর্থাৎ ‘বাহির হতে যা আসে তাই আয়। কোনো মানুষই নিজের সাথে ব্যবসা করে লাভ করতে পারে না।

(ii) Bhagwan Das

Jain vs Union of India (1981) মামলার রায়ে বলা হয়েছে, “Essentially, the concepts of income indicates Something which goes in to the Pocket of the assesses and not what saves its Pocket” -অর্থাৎ মূলত: আয়ের ধারণা হলো যা করদাতার পকেটে আসে তা আয়, খরচ বাদ দেয়ার পর উদ্বৃত্ত অংশ নয়। অর্থাৎ মোট প্রাপ্তিকে আয় বলে বিবেচনা করা হয়েছে, খরচ বাদ দেয়ার পর যে উদ্বৃত্ত অংশ থাকে তা নয়।

পরিশেষে বলা যায়, আয় বলতে নির্দিষ্ট উৎস থেকে নিয়মিত ভাবে বা আশানুরূপ নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর অর্থ বা অর্থের আকারে যে প্রাপ্তি ঘটে আয়করের উদ্দেশ্যে তাই হলো আয়।

🔳 প্রশ্ন-০২ঃ আয়কর ধার্যের উদ্দেশ্যে আয়ের বৈশিষ্ট্য।

সাধারণভাবে যে কোনো উপার্জনই আয়। কিন্তু আয়কর আইনে অনুযায়ী, যে আয়ের উপর কর ধার্য হবে তাকে বুঝায়। আয়কর ধার্যে উদ্দেশ্যে আয়ের কতগুলা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়ঃ-

(i) অর্থ বা অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্যঃ

আয় অর্থ বা অর্থের অংকেপরিমাপযোগ্য হতে হবে। যেমন নিয়োগকর্তার নিকট থেকে কর্মীর প্রাপ্ত নগদ যানবাহন ভাতা যেমন আয় তেমনি প্রাপ্ত যাতায়াত সুবিধা বা যানবাহন সুবিধাও আয়। অনুরূপভাবে প্রাপ্ত ভাড়া মুক্ত বাসস্থান সুবিধাওআয়।

(ii) তৃতীয় ব্যক্তির নিকট থেকে প্রাপ্তঃ

আয় অবশ্যই তৃতীয় ব্যক্তির নিকট থেকে প্রাপ্ত হতে হবে। যেমননিজের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলিত অর্থ আয় নয়।

(iii) প্রাপ্ত বা প্রাপ্যঃ

কোনো প্রাপ্তি বাস্তবে পাওয়া গেলেআয় বলে গণ্য হবে। তবে যে আয় এখনও হাতে আসেনি কিন্তু পাওয়ার নিশ্চিত অধিকার জন্মেছে তাও আয়।

(iv) বৈধ ও অবৈধ প্রাপ্তিঃ

শুধুমাত্র বৈধ উৎস থেকে প্রাপ্তিই আয় বলে গণ্য হবে এমন নয়, অবৈধ উৎসহতে প্রাপ্তিও করধার্যোপযোগী আয় হতে পারে।

(v) নির্দিষ্ঠ উৎস হতে প্রাপ্তিঃ

আয়ের অবশ্যই নির্দিষ্ট উৎস বা খাত থাকতে হবে। যেমন ৩০ ধারা অনুসারে আয়ের ৭টি খাতের উল্লেখ আছে,আবার বর্তমান আয়কর অনুসারে আয়কর রিটার্ণে ১০ টি খাতের উল্লেখ আছে।

(vi) বাধ্যতামূলক বা স্বেচ্ছামূলক প্রাপ্তিঃ

আয় বাধ্যতামূলক বা স্বেচ্ছামূলক প্রাপ্তি উভয়ই হতে পারে। যেমন বেতন, বোনাস, বাধ্যতামূলক প্রাপ্তি যা আয়হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু চাকুরির ন্যায় কিন্তু মালিক কর্মচারিকে যাতায়াতের গাড়ী দিলে তা অবশ্যই আয় হিসেবে গণ্য হবে।

(vii) নিয়মিত বা অনিয়মিত প্রাপ্তিঃ

আয় নিয়মিত বা অনিয়মিত উভয়ই হতে পারে। যেমন বেতন একটি নিয়মিত আয়, আর লটারির পুরস্কার অনিয়মিত আয়।

(viii) লোকসানঃ

আয়ের মধ্যে লোকসান অন্তর্ভুক্তথাকবে। যেমন কোনো নির্দিষ্ট বছরে বিভিন্ন খাতের আয়ের সাথে কোনো নির্দিষ্ট খাতের লোকসান হলে তা সমন্বয় করা হবে।

(ix) প্রকৃত আয়ঃ

আয় করের উদ্দেশ্যে আয় অবশ্যই প্রকৃত হতে হবে অর্থাৎ এটা প্রাপ্ত বাপ্রাপ্য হতে হবে। কল্পনা প্রসূত হলে হবে না।

(x) সঞ্চিত অর্থঃ

কোনো নির্দিষ্ট বছরের আয় হতে ব্যয় করার পর সঞ্চিত অর্থ পরবর্তী বছরের আয়ের সাথে যোগ করা হবে না। কারণ এটি পূর্ববর্তী বছরের আয় হিসেবে গণনা করা হয়ে গেছে।

পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকলে করদাতার আয়কে করযোগ্য বলা যায়।

🔳 প্রশ্ন-০৩ঃ আয়কর ধার্যের উদ্দেশ্যে আয়ের শ্রেণিবিভাগ।

করদাতার সকল প্রকার প্রাপ্তি আয়কর ধার্যের উদ্দেশ্য আয় নয়। আয়কর ধার্যের উদ্দেশ্যে আয়ের শ্রেণী বিভাগ নিম্নরূপ:

১. অকর ধার্য আয়ঃ

করদাতার মোট আয় নির্ণয়ে যে সব আয় অন্তর্ভুক্ত হয় না তাকে অকরধার্য আয় বলে। আয়কর আইন ২০২৩ এর ৭৬ ধারায় ষষ্ঠ তফসিলের ‘১’ অংশে এ প্রকার আয়ের তালিকা দেয়া হয়েছে।

২.কর ধার্য আয়ঃ

করদাতার মোট আয় নির্ণয়ে যেসব আয় অন্তর্ভুক্ত হয় তাদেরকে করধার্য আয় বলে। অর্থাৎ সামগ্রিক ২ আয় থেকে অকরধার্য আয় বা কর বহির্ভূত আয় বাদ দেয়ার পরে যে আয় থাকে তাকে করধার্য আয় বলে।

কর ধার্য আয়কে আবার এভাবে ভাগ করা হয়েছে। যা নিম্নরূপ:

(ক) কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়ঃ 

কর যোগ্য মোট আয়ের যে অংশের উপর সরকার কর অব্যাহতি প্রদান করেছে তাকে কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় বলে।

(খ) কর মুক্ত আয়ঃ

যেসব আয় করদাতার মোট আয় নির্ণয় এবং করের হারনির্ণয়ের জন্যে মোট আয়ের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং পরবর্তীতে তার উপর গড় হারে কর ছাড় পাওয়া যায় সে সব আয়কে করমুক্ত আয় বলে।

গ) কর রেয়াতযোগ্য আয়ঃ

যে সব আয় করদাতার মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত অংশ কিন্তু করদায় নির্ণয় করার সময় উক্ত আয়ের উপর নির্দিষ্ট হারে ছাড় পাওয়া যায় তাকে কর রেয়াতযোগ্য আয় বলে।

(ঘ) কর প্রদেয় আয়ঃ

যে আয়ের উপর করদাতাকে প্রকৃতপক্ষে কর দিতে হয় তাকে কর প্রদেয় আয় বলে। মোট আয় থেকে কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত, করমুক্ত ও কর রেয়াতযোগ্য আয় বাদ দিলে পাওয়া যায় কর প্রদেয় আয়।

🔳 প্রশ্ন-০৪ঃ করদাতার শ্রেণিবিভাগ।

আয়কর আইন ২০২৩-এ করদাতাকে দু’টি দৃষ্টিকোন থেকে ভাগ করা হয়েছে।

যেমন: (ক) ব্যক্তির ভিত্তিতে (খ) আবাসিক মর্যাদার ভিত্তিতে

(ক) ব্যক্তির ভিত্তিতে করদাতাঃ আয়কর আইন ২০২৩ এর ২ (৬৯) ধারা অনুযায়ী ব্যক্তি হিসেবে করদাতা বলতে নিম্নের অবস্থাকে বুঝানো হয়েছেঃ

১। একক ব্যক্তিঃ

একক ব্যক্তি বলতে এমন কোনো লোক বা সংস্থাকে বুঝাবে যিনি আয়কর প্রদানের উদ্দেশ্যে আয় অর্জনকারী হবেন। সুতরাং যে সব লোক পেশা, বৃত্তি, ব্যবসায় বা অন্য কোনো উৎস থেকে আয় অর্জন করেন তিনিই একক ব্যক্তি।

২। অংশীদারি ফার্মঃ

বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী গঠিত কারবারকে অংশীদারি ২ কারবার বলে। অংশীদারি কারবারকে ব্যক্তি করদাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

৩। ব্যক্তি সংঘঃ

ব্যাক্তি সংঘ বলতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কোনো সমিতিকে বুঝায়। যেমন সমবায় সমিতি, বণিক সংঘ প্রভৃতি।

৪। হিন্দু অবিভক্ত পরিবারঃ

হিন্দু আইনঅনুযায়ী পরিচালিত একান্নবর্তী পরিবার এ ধরনের করদাতা হিসেবে বিবেচিত।

৫। স্থানীয় কর্তৃপক্ষঃ

জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, রাজউক প্রভৃতি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জনসেবামূলক কাজ ব্যাতীত নিজ স্থানের বাহিরে সেবা জনিত আয়ের জন্যে কর দিতে বাধ্য।

৬। কৃত্রিম ব্যক্তিসভাঃ

এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণ করদাতা হিসেবে বিবেচিত নয়। এসব প্রতিষ্ঠান বিশেষ আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।যেমন- পি.ডি.বি; বি.আর.টি.সিঃ প্রভৃতি।

৭। কোম্পানিঃ

এ আইনে কোম্পানি হিসেবে জাতীয় সংসদকর্তৃক বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত কোনো কর্পোরেশরন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান এবংবিদেশী সংস্থাকে কোম্পানির অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

(খ) আবাসিক মর্যাদা হিসেবে করদাতাঃ আবাসিক মর্যাদার ভিত্তিতেকরদাতাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়:

১। বাসিন্দা বা আবাসিক করদাতাঃ

আয়কর আইন ২০২৩-এর ২ (৪৫) ধারায় উল্লেখিত আবাসিক হওয়ায় শর্তাবলী পালন করলে করদাতাকে আবাসিক করদাতা হিসেবে গণ্য করা হবে। আবাসিক করদাতাকে দেশের ভিতরের ও বাহিরের আয়ের উপর কর দিতে হয়।

২। অবাসিন্দা বা অনাবাসিকঃ

আয়কর আইন ২০২৩-এর ২ (৪৫) ধারার শর্তাবলী পালন না করলে করদাতাকে অনাবাসিক করদাতা বলা হয়। অনাবাসিক করদাতাকে শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে অর্জিত আয়ের উপর কর প্রদান করতে হয়।

🔳 প্রশ্ন-০৫ঃ করদাতার আবাসিক মর্যাদা নির্ণয়ের নিয়মাবলি।

করদাতার আবাসস্থাগত মর্যাদাকে আবাসিক মর্যাদা বলে। করদাতার আবাসিক মর্যাদা নির্ণয়ে করদাতাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে কর নির্ধারণে করদাতার আবাসিকতা নির্ণয়ের নিয়মাবলি আলোচনা করা হয়েছেঃ

১. একক ব্যক্তির আবাসিক মর্যাদাঃ

আয়কর আইন ২০২৩ ২ (৪৫) ধারার ‘ক’ ধারা অনুসারে, কোনো একক ব্যক্তি নিম্নোক্ত দু’টি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করলে আয়বর্ষে তিনি বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হবেন:

(ক) যদি উক্ত ব্যক্তি আয়বর্ষে কমপক্ষে ১৮২ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করেন।

(খ) যদি উক্ত ব্যক্তি আয়বর্ষে সর্বমোট ৯০ দিন এবং আয়বর্ষের পূর্ববর্তী ৪ বছরের মধ্যে কমপক্ষে সর্বমোট ৩৬৫ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করেন।

২. হিন্দু অবিভক্ত পরিবার, অংশীদারি কারবার ও ব্যক্তি সংঘের আবসিক মর্যাদাঃ

আয়কর আইন ২০২৩ ২ (৪৫) ধারা অনুযায়ী যদি এদের কার্যাবলীর নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত হয় উক্ত করদাতা বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

৩. কোম্পানির আবাসিক মর্যাদাঃ

আয়কর আইন ২০২৩ ২ (৪৫) ধারা অনুযায়ী যদি কোনোকোম্পানির কার্যাবলীর নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা আয়বর্ষে সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশে অবস্থিত হয় তবে উক্ত কোম্পানীকে বাসিন্দা করদাতা হিসেবে গণ্য করা হবে।

🔳 প্রশ্ন-০৬ঃ আয়কর কর্তৃপক্ষ Income Tax Authority.

সাধারণভাবে আয়কর সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীআয়কর কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হন। আয়কর আইন ২০২৩, ধারা(৪) অনুযায়ী আয়কর কর্তৃপক্ষ বলতে শুধু প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকেই বুঝায়। এছাড়াও বর্তমান প্রচলিত আয়কর আইন-২০২৩ অনুসারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ আয়কর কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

কার্যসম্পাদনের ভিত্তিতে আয়কর কর্তৃপক্ষকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ

(ক) প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ,

(খ) বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।

(ক) প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষঃ

২০২৩ সালের আয়কর আইনের ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী গঠিত কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বলা হয়। এ কর্তৃপক্ষ কর প্রশাসন পরিচালনা, ব্যবস্থপনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন। করদাতা শনাক্তকরণ,করদাতা শ্রেণীবদ্ধকরণ, মোট আয় ও করদায় নির্ণয় এবং কর আদায় সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাজ।

(খ) বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষঃ

২০২৩ সালের আয়কর আইনের ৪ ধারার ১৩ ধারা অনুযায়ী যে কর্তৃপক্ষ আয়কর সংক্রান্ত বিচার বিভাগীয় কার্যাবলী সম্পাদনকরেন তাদেরকে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বলা হয়। কোনো করদাতা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তোষ্ট না হলে এ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ, আপিল আপত্তি উপস্থাপন করতে পারেন। এগুলো নিস্পত্তি করা বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাজ।

🔳 প্রশ্ন-০৭ঃ  আয় করের প্রশাসনিক বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।

২০২৩ সালের আয়কর আইনের ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী গঠিত কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বলা হয়। এ কর্তৃপক্ষ কর প্রশাসন পরিচালনা, ব্যবস্থপনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন। করদাতা শনাক্তকরণ,করদাতা শ্রেণীবদ্ধকরণ, মোট আয় ও করদায় নির্ণয় এবং কর আদায় সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাজ।

আয়করের প্রশাসনিক বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো:-

১। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডঃ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর বিষয়ক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে আয়কর আইন অনুযায়ী সকল প্রশাসনিক ও বিচার সংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পন্ন করে। এ বোর্ডেরসদস্যগণ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন।

২। চীফ কমিশনার অব ট্যাক্সেসঃ

২০২৩ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী আয়কর কর্তৃপক্ষ চীফ কমিশনার অব ট্যাক্স হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যাক্তিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়োগ দিতে পারেন।মূখ্য কর কমিশনার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর আওতাধীন থেকে প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করবেন।

৩। মহাপরিচালক(পরিদর্শক)করঃ

পরিদর্শন মহপরিচালক কর সাধরণত আয়কর মামলাসমূহ তদন্ত, আয়কর সংক্রান্ত মামলাসমূহ ও অফিস নিরীক্ষা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আয়কর সংক্রান্তঅফিস সম্পর্কে বার্ষিক রিপোর্ট প্রদান করা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অর্পিত অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন।

৪। কর কমিশনার (বৃহদাকার কর প্রদানকারী ইউনিট):

আয়কর আইন ২০২৩ এর অধীনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং বোর্ডের নির্দেশ মত তার কার্যবলি পরিচালনা করেন এবং বৃহদাকার কর প্রধান কারী অঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে মোট কর আদায় ও সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করেন।

৫। মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ):

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে থাকেন। মহাপরিচালক প্রশিক্ষন এর প্রধান কাজ হলো আয়কর বিভাগের সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।

৬। মহাপরিচালক (কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল):

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী,তথ্য যাচাই, তদন্ত করা, জব্দ করা, তল্লাশী এবং আটক করার কার্যাদি পরিচালনা করে থাকেন।

৭। কর কমিশনারঃ

কমিশনার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত হন এবং বোর্ডের সরাসরি নিয়ন্ত্রনাধীন থেকে কার্য সম্পাদন করেন। তারা নির্দিষ্ট আয়কর এলাকার বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করে থাকেন।

৮। অতিরিক্ত কর কমিশনার (পরিদর্শন):

অতিরিক্ত কর কমিশনার পরিদর্শন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী তার কার্য পরিচালনা করে থাকেন। অধস্তনদের কার্যাবলী তদারক ও নির্দিষ্ট অঞ্চলের কর ফাঁকি রোধ করাই তার প্রধান কাজ।

৯। যুগ্ম কর কমিশনারঃ

যে কর কমিশনারের অধিনে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন,সে কর কমিশনারের আরোপিত দায়িত্ব পলন করবেন।

১০। উপকর কমিশনারঃ

তিনি যে কমিশনারের অধীনে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন, তার অধীনের থেকে আয়কর নির্ধারণ সহ আয়কর সংগ্রহের সিংহভাগ কাজ সম্পাদন করেন।

১১। কর আদায়কারী অফিসারঃ

উপকর কমিশনারের অধীনে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন, তার অধীনের থেকে কর আদায় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পাদন করবেন।

১২। সহকারী কর কমিশনারঃ

উপকর কমিশনারের অধীনে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন, উপকর কমিশনার অনুপস্থিতিতে তিনি তার অনুরূপ কাজ করার ক্ষমতা রাখেন।

১৩। অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনারঃ

উপকর কমিশনারের অধীনে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন, তার অধীনের থেকে করদাতাদের বিজ্ঞপ্তি প্রদান, হিসাব দাখিল সহ কর আদায়ের যাবতীয় কাজ করেন।

১৪। কর পরিদর্শকঃ

উপকর কমিশনারের অধীনে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন, তার অধীনের থেকে তার নির্দেশ অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করবেন।

🔳 প্রশ্ন-০৮ঃ আয় করের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ

২০২৩ সালের আয়কর আইনের ৪ ধারার ১৩ ধারা অনুযায়ী যে কর্তৃপক্ষ আয়কর সংক্রান্ত বিচার বিভাগীয় কার্যাবলী সম্পাদনকরেন তাদেরকে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বলা হয়। কোনো করদাতা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তোষ্ট না হলে এ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ, আপিল আপত্তি উপস্থাপন করতে পারেন। এগুলো নিস্পত্তি করা বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাজ।

আয়করের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো:-

১। অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালঃ

আয়কর ২০২৩ এর বিধান অনুসারে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সদস্যগণ সরকারের আইনমন্ত্রণালয় কর্তৃক সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এতে একজন সভাপতি এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য থাকেন। এটা আয়কর সংক্রান্ত বিচার বিভাগীয় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। আয়করের বিষয়ে এ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ।

২। কর কমিশনার আপিলঃ

আয়কর সংক্রান্ত বিচারকার্য পরিচালনার জন্য এ পদটি সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত হন এবং বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি উপ-কর কমিশনার বা যুগ্ম কর কমিশনার কর্তৃক কর নির্ধারনের শুনানি পরিচালনা করে ন্যায় সঙ্গত রায় প্রদান করেন

৩। অতিরিক্ত কর কমিশনার আপিলঃ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অতিরিক্ত কর কমিশনার আপিল নিযুক্ত হন এবং রাজস্ব বোর্ড ও কর কমিশনার অ্যাপিল এর নিয়ন্ত্রনাধীন থেকে আপিল সংক্রান্ত বিচার কার্য সম্পাদন করে থাকেন। বিচার কার্য সম্পাদনে তিনি স্থায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।

৪। যুগ্ম কর কমিশনার আপিলঃ

যুগ্ম কর কমিশনার আপিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত হন। বিচার কার্য সম্পাদনে তাঁরা স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেন। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিচার কার্যে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।

🔳 প্রশ্ন-০৯ঃ জাতীয় রাজ্বস বোর্ডের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

১৯৭২ সালের গঠিত জাতীয় রাজ্বস বোর্ড (NBR) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থেকে আয়কর নীতিমালা অনুযায়ী কার্য পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে ।জাতীয় রাজ্বস বোর্ড আয়কর আইন অনুযায়ী দেশের সর্বোচ্চ আয়কর কর্তৃপক্ষ। জাতীয় রাজ্বস বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য সরকার সরাসরি নিয়োগ দেন। নিচে জাতীয় রাজ্বস বোর্ডের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হলঃ

১। কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগঃ

আয়কর আইন-২০২৩ এর ধারা-৫(২) অনুযায়ী কার্য সম্পাদনের জন্য জাতীয় রাজ্বস বোর্ড প্রয়োজনীয় সংখ্যাক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা রাখে।

২। আদেশ, উপদেশ ও নির্দেশনা প্রদানঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড তার অধীনস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আদেশ , উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান করতে পারেন, কিন্তু যুগ্ম কর কমিশনার (আপিল) এর বিচার সংক্রান্ত কাজে নির্দেশ দিতে পারেন না।

৩। ক্ষমতা অর্পণঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড অতিরিক্ত কর কমিশনার (পরিদর্শন) কে কর কমিশনারের ক্ষমতা ও অতিরিক্ত যুগ্ম অ্যাপিলেট কর কমিশনারকে কর কমিশনার (আপিল) এর ক্ষমতা অর্পন করতে পারে।

৪। বিধি প্রণয়ন ও সংশোধণঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড বিধি প্রণয়ন প্রাক-প্রকাশনার পর জনগনের আপত্তি না, থাকলে চূড়ান্ত বিধি প্রণয়ন বা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে।

৫। দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টণ , হস্থান্তর বা পরিবর্তনঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড বিধি অনুযায়ী অধীনস্তদের দায়িত্ব বন্টন, পরিবর্তন ও হস্তান্তর করার ক্ষমতা রাখে।

৬। দলিল পত্র সংরক্ষণ ও হিসাব রক্ষণ পদ্ধতিঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড প্রয়োজন মনে করলে যে কোন করদাতার তথ্য, দলিল পত্র বা হিসাব সংরক্ষন করার নির্দেশ দিতে পারে।

৭। প্রতিনিধি নির্বাচন ও নিবন্ধনঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড করদাতার অনুমোদিত কোন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট বা হিসাব বিজ্ঞানী সংস্থাকে স্বীকৃতি বা নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

৮। আয়বর্ষ ও করবর্ষ নির্ধারণঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড করদাতার আয়বর্ষ ও করবর্ষ নির্ধারণ করতে পারবে।

৯। কর রেয়াত বা অবকাশ প্রদানঃ

জাতীয় রাজ্বস বোর্ড সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট কোন অঞ্চল কে কর রেয়াত বা কর অবকাশ দিতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, বিধি অনুযায়ী আয়কর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করে।

🔳 প্রশ্ন-১০ঃ আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা কয় টি ও কি কি ?

আয়কর আইন ২০২৩ এর ৩২ ধারা অনুযায়ী আয়ের খাত ৭ টিঃ

১। চাকরি হতে আয় ধারা-৩২

২। ভাড়া হতে আয় ধারা-৩৫

৩। কৃষি হতে আয় ধারা-৪০

৪। ব্যবসা হতে আয় ধারা-৪৫

৫। মূলধনী আয় ধারা-৫৭

৬। আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয় ধারা-৬২

৭। অন্যান্য উৎস হতে আয় ধারা-৬৬

বর্তমানে আয়কর বিধিমালা অনুযায়ী, আয়কর রিটার্ণে অতিরিক্ত ৩ টি খাত সহ মোট ১০ টি খাত উল্লেখ করা আছেঃ

৮। ফার্মের আয়ের অংশ ধারা-২৪

৯। স্বামী/স্ত্রী বা নাবালক সন্তানের আয় ধারা-৪৩(৪)

১০। বৈদেশিক আয় বিধি-২৪

Related Video Course
0% Complete

You cannot copy