অধ্যায়-০১ঃ কর ব্যবস্থার তত্ত্ব
🔳 প্রশ্ন-০১ঃ করের সংজ্ঞা (Definition of Tax)
সরকারি অর্থ সাধারণত দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা স্বাস্থ্য এবং বহির্বিশ্বের শত্রুর হাত থেকে দেশকে বাঁচানো ও দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করতে ব্যবহূত হয়ে থাকে। সরকার এসব অর্থঅর্জন করে বিভিন্ন খাত হতে তার মধ্যে প্রধান উৎস হলোকর রাজস্ব বাবদ সংগৃহীত অর্থ।
সহজ ভাবে বলতে কর হল, সরকারের কাছে সরাসরি কোনরূপ উপকার আশা না করে, সরকারের কাছে নাগরিকদের অর্থ প্রদানের একটি বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা, এর মাধ্যমে দেশের উন্নতির জন্য নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাকে কর (Tax) বলা হয়।
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ যেভাবে করের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ—
মিঃ ডালটন বলেন, “কর হচ্ছে একটি বাধ্যতামূলক চাঁদা যার প্রতিদানে করদাতাকে কিছু পরিমাণ সেবা প্রদানের সম্পর্ক নেই অথবা কোন আইনগত অপরাধের জন্য অর্থদণ্ড হিসাবে প্রয়োগ করা হয় না।”
ল্যারী বিউলিউ বলেন, “কর হচ্ছে শুদ্ধভাবে ও সরলভাবে প্রত্যক্ষ কিংবা মুখোশ ঢাকা একটি চাঁদা যা সরকারি কর্তৃপক্ষ অধিবাসী কিংবা দ্রব্যের উপর সরকারি ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে আরোপ করে।”
এ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং অন্যান্যদের মতে, “কর হচ্ছে সেই কোঠা যা সরকারি সেবার খরচকে সামনে রেখে প্রতিটি নাগরিক প্রদান করে থাকে।”
অর্থনীতিবিদ টেইলর বলেন, “জনসাধারণ বাধ্যতামূলকভাবে সরকারকে যে অর্থ কোনরূপ প্রত্যক্ষ সুবিধার আশা না করে প্রদান করে তাকে কর বলা হয়।”
উপরোক্ত আলোচনার পেক্ষিতে বলা যায় যে, সরকারের মাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশেষ লেনদেন থেকে দেশ পরিচালনা এবং দেশের উন্নয়নের জন্য আইনের সাহায্যে বাধ্যতামূলকভাবে অর্জিত অর্থকেই কর হিসাবে অভিহিত করা হয়।
🔳 প্রশ্ন-০২ঃ কর ধার্যের নীতিমালা আলোচনা কর।
জনসাধারণের যাতে কর দিতে অসুবিধা না হয় এবং কারো উপর যাতে কোনোরূপ অবিচার না করা হয় তার জন্য সরকার করধার্যের সময় কতকগুলো নীতি বা সূত্র মেনে চলে, সেগুলোকে করের নীতি বা কানুন বলা হয় । প্রখ্যাত অর্থশাস্ত্রবিদ এডাম স্মিথ (Adam Smith) করধার্যের চারটি নীতির উল্লেখ করেছেন, এগুলো হলোঃ
১. সামর্থ্য বা সমতার নীতিঃ
প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সরকারকে কর প্রদান করবে। সামর্থ্য অনুযায়ী করভার বহন করার ফলে যে ত্যাগ স্বীকার করে, কর প্রদানের মাধ্যমে উক্ত ত্যাগের পরিমাণে আসে এবং সমাজের সামগ্রিক করভার সর্বাপেক্ষা কম হয় ।
২. নিশ্চয়তার নীতিঃ
প্রত্যেক করদাতা কি পরিমাণ কর প্রদান করবে এবং কর প্রদানের সময় পূর্ব হতেই নির্দিষ্ট করে দিতে হয় নিশ্চয়তার নীতি অনুসারে। করদাতাগণ যদি পূর্ব হতেই নিশ্চিতভাবে জানতে পারে তাকে কি পরিমাণ কর কখন দিতে হবে। তাহলে তারা বুঝতে পারে কর প্রদানের পর কি পরিমাণ আয় অবশিষ্ট থাকবে এবং তদনুযায়ী সে তার ব্যক্তিগত বাজেট প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে।
৩. সুবিধার নীতিঃ
এ নীতি অনুসারে যে সময়ে এবং যে পদ্ধতিতে কর প্রদান করদাতাগণের পক্ষে সুবিধাজনক সে সময়ে এবং সে পদ্ধতিতে কর আদায় করা উচিত। যেমন – কৃষকের নিকট থেকে ফসল তোলার পর এবং ব্যবসায়ীদের নিকট হতে হিসাব বছর শেষে কর আদায় করলে ভালো হয় ৷
৪. মিতব্যয়িতার নীতিঃ
এ নীতি অনুযায়ী কর আদায় করার ব্যয় যথাসম্ভব কম হওয়া উচিত। কর আদায় বাবদ যে রাজস্ব আদায় করা হয় তার অধিকাংশ যদি কর আদায়ের জন্য ব্যয়িত হয়ে যায় | তাহলে এরূপ করধার্য করার আয় যৌক্তিকতা থাকে না। সুতরাং যথাসম্ভব কৃচ্ছতার নীতি অনুসরণ করে কর আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ উপরিউক্ত চারটি নীতি ছাড়াও আরও চারটি কথা উল্লেখ করেছেন; যাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলোঃ
১. উৎপাদনশীলতার নীতিঃ
এ নীতি অনুযায়ী কর উৎপাদনক্ষম হওয়া বাঞ্ছনীয়। কর ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে প্রচুর অর্থাৎ যথাসম্ভব রাজস্ব সংগ্রহ করা যায় এবং ব্যবসায় বাণিজ্য প্রসার ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে ।
২. স্থিতিস্থাপকতার নীতিঃ
করধার্যের এ নীতি অনুসারে করধার্য এমনভাবে করতে হবে যেন প্রয়োজনবোধের করের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়। আধুনিক যুগে করের এ স্থিতিস্থাপকতার নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৩. সরলতার নীতিঃ
এ নীতি অনুসারে কোনো দেশের কর ব্যবস্থা সহজ ও সরল হওয়া উচিত যাতে করদাতাদের পক্ষে তা বুঝতে কোনোরূপ অসুবিধা না হয়। করের নিয়মকানুন সহজ ও বোধগম্য হলে কর প্রদান করা করদাতাদের পক্ষে সহজ হয়।
৪. বিভিন্নতার নীতিঃ
এ নীতি অনুসারে কর ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে বেশি সংখ্যক ব্যক্তি কর দিতে বাধ্য থাকে । এজন্য কর ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রকার কর থাকতে হয় যাতে করভার সমাজের সকলের উপর সমভাবে বণ্টিত হয়।
🔳 প্রশ্ন-০৩ঃ উত্তম কর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য আলচনা কর।
একটি উত্তম কর ব্যবস্থার যে সকল বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী থাকা উচিত তা নিম্নে আলোচনা করা হয়েছেঃ
১. সামর্থ্য অনুযায়ী কর ধার্যঃ
উত্তম করব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, করদাতার সামর্থ্য অনুযায়ী কর ধার্য করা। রাজ্বস আদায়ের পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত করে ভার যেনো কারো উপর দেওয়া না হয়।
২. করভার বন্টনঃ
উত্তম করব্যবস্থায় করের ভার বন্টনে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মধ্যে এমন ভাবে ভাগ করে দিতে হবে যেনো কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ও কেউ বেশি ছাড় পেয়ে না যায়।
৩. উৎপাদনশীলতা বজায় রাখাঃ
উত্তম করব্যবস্থায় উৎপাদনশীলতার বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, দেশের আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে, উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে, কর ব্যবস্থা।
৪. স্থিতিস্থাপকতারঃ
উত্তম করব্যবস্থায় এই পদ্ধতিকে যথেষ্ট নমনীয় বা স্থিতিস্থাপকত হতে হবে, যেন প্রয়োজনে সহজেই করের হারের হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়।
৫. নিশ্চয়তারঃ
উত্তম কর ব্যবস্থায় কর আদায়ের হার ও কর আদায়ের নির্দিষ্ট্য সময় নিশ্চিত করলে, সরকারের রাজ্বয় আদায় বৃদ্ধি সহ কর আদায় প্রক্রিয়া অনেক সহজ হবে।
৬. মিতব্যয়িতারঃ
উত্তম করব্যবস্থায় মিতব্যয়িতার নীতি অনুসরণ করে, ব্যয় সংকোচন করা উচিত। কর আদায়ের খরচ যথাসম্ভব কম ও অপ্রয়োজনীয় খরচ পরিহার করা উচিত।
৭. সরলতার নীতিঃ
উত্তম করব্যবস্থা হবে সকলের নিকট সহজে বোধগম্য ও কোন তথ্যে থাকবে না, অস্পষ্টতা।
৮. কর ফাঁকি রোধঃ
উত্তম করব্যবস্থায় কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ রাখা যাবে না, কর ফাঁকি রোধের কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
🔳 প্রশ্ন-০৪ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নে করের ভূমিকা বা গুরুত্ব আলোচনা কর।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে কোনো দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিকে বুঝায়। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কর অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিম্নোক্ত ভূমিকা পালন করেঃ
১। সরকার করের মাধ্যমে উৎপাদনের চারটি উপাদান, যথা ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় করতে পারে।
২। সরকার করের মাধ্যমে কোনো দ্রব্যের উৎপাদন হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারে। অতিরিক্ত করারোপ করা বা কর প্রত্যাহার করা সম্ভব।
৩। সরকার করারোপের মাধ্যমে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারে।
৪। কর ধার্যের মাধ্যমে আয়ের পুনঃ বন্টন সুষম করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারে।
৫। সরকার করারোপ করে রাজস্ব সংগ্রহ করে মৌলিক শিল্প প্রক্রিয়া, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
৬। সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী করহার পরিবর্তন করে অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে পারে।
৭। সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও মূলধন গঠনের মাধ্যমে কর অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে পারে।
৮। মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচনে অন্যান্য রাজস্বনীতির সাথে করনীতিও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ব্যবহার করতে পারে।
৯। ব্যক্তি বিশেষ ও অঞ্চল বিশেষের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে সার্বিক উন্নয়ন করতে পারে।
১০। কোনো বিশেষ পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
১১। দেশীয় শিল্প সংরক্ষণে বিদেশি পণ্যের উপর অতিরিক্ত করারোপ করে উন্নয়ন সম্ভব।
১২। ক্ষতিকারক ও বিলাস দ্রব্যের উৎপাদন করারোপ করে হ্রাস করে উন্নয়ন সম্ভব।
উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে করের ভূমিকা ব্যাপক। কারণ করের মাধ্যমে রাজস্ব সৃষ্টি হয় এবং সেই রাজস্বের দ্বারা সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
🔳 প্রশ্ন-০৫ঃ কর ধার্যের উদ্দেশ্য কর।
করের উদ্দেশ্য দেশ পরিচালনা, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক কল্যান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রভৃতির জন্য সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। কর এরুপ ব্যয় নির্বাহের জন্যে সরকারের একটি প্রধান হাতিয়ার বা উৎস। কর ধার্যের কয়েকটি প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপঃ
১. রাজস্ব আদায়ঃ
কর ধার্যের প্রধানউদ্দেশ্য হলো রাজস্ব আদায় করা। সরকারের বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদনের জন্যে যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হয়। কর রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস।
২. শিল্প সংরক্ষনঃ
দেশের শিল্প খাতকে সংরক্ষনের প্রয়োজনেও কর ধার্য্য করা হয়। এ উদ্দেশ্যে দেশীয় শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের উপর কম হারে এবং বিদেশ হতে ঐ একই পণ্য আমদানির উপর বেশী হারে কর ধার্য করা হয়। ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে।
৩. ভোগ নিয়ন্ত্রণঃ
ভোগ নিয়ন্ত্রণ কর ধার্যের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিলাস সামগ্রী ও ক্ষতিকর দ্রব্যের উপর কর ধার্য করে তাদের ব্যবহার কমানো ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৪. সঞ্চয়ে উৎসাহিত করাঃ
সুনির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগের উপর কর অব্যাহতি বা বিনিয়োগ ভাতা প্রদানের মাধ্যমে করদাতাকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা হয়।
৫. অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ
কৃষি, শিল্প,অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন প্রভৃতি নানবিধ উন্নয়ন সাধনের জন্যে সরকারের বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। কর ধার্যের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সরকার এসব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
৬. আয়ের পুনর্বন্টনঃ
ধনীদের উপর আয়কর, সম্পদ কর, দান কর ধার্য করে সংগৃহীত অর্থ জনকল্যান খাতে ব্যয় করে সরকার জাতীয় আয়ের পুনর্বণ্টনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৭. সামাজিক নিরাপত্তায়ঃ
দেশের জনগণের নিরাপত্তায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রভৃতি কর্মসূচী বাস্তবায়নে কর রাজস্ব সরকারকে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করে থাকে।
৮. অবকাঠামো উন্নয়নঃ
সরকার জনসাধারনের উপর কর ধার্য করে সংগৃহীত অর্থ যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যয় করে থাকে।
৯. পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগঃ
দেশি বিদেশি পুঁজিপতিগণকে কর সংক্রান্ত নানা প্রকার সুবিধা প্রদান করে পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া হয়। এদের মধ্যে কর অবকাশ, অবচয় ভাতা, বিনিয়োগ কর রেয়াত প্রভৃতি অন্যতম।
🔳 প্রশ্ন-০৬ঃ করের প্রকার ভেদ আলোচনা কর।
কর সরকারি রাজস্বের প্রধান উৎস। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। নিম্নে প্রধান কয়েকটি শ্রেণি বিভাগ দেখানো হলোঃ
১। প্রত্যক্ষ করঃ
যে কর প্রথমে যার উপর ধার্য করা হয় চূড়ান্তভাবে তাকেই পরিশোধ করতে হয় তাকে প্রত্যক্ষ কর বলা হয়। অর্থাৎ এ কর কোনোভাবেই অন্যের উপর চাপানো যায় না। যেমন আয়কর, ভূমি রাজস্ব, সম্পদ কর প্রভৃতি।
২। পরোক্ষ করঃ
কোনো ব্যক্তির উপর কর ধার্য করা হলে সে যদি করের ভার অন্যের উপর চাপাতে পারে তাকে বলা হয় পরোক্ষ কর। পরোক্ষ করের উদাহরণ হচ্ছে- ভ্যাট, বিক্রয় কর, আমদানী শুল্ক প্রভৃতি।
৩। প্রগতিশীল করঃ
যে কর ব্যবস্থায় করের ভিত্তি বাড়ার সাথে সাথে কর হারও বাড়ে তাকে বলাহয় প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় মোট আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে করের হারও বৃদ্ধি পায়।
৪। সমানুপাতিক কর ব্যবস্থাঃ
সকল স্তরের আয়ের উপর যদি একই হারে কর ধার্য হয় তবে তাকে সমানুপাতিক কর বলা হয়। এ ক্ষেত্রে আয়ের পরিমান বেশী হলে করের পরিমান বাড়বে কিন্তু হার সমান থাকবে।
৫। একক করঃ
কোনো দেশে যদি একটিমাত্র কর ধার্য করা হয় তখন তাকে বলা হয় একক কর। বর্তমানে এ ধরনের করের প্রচলন নেই।
৬। পশ্চাৎ গতিশীল করঃ
যে কর ব্যবস্থায় করের ভিত্তি বাড়ার সাথে সাথে করের হার কমে যায় তাকে বলা হয় পশ্চাৎ গতিশীল কর ব্যবস্থা। এতে মোট করের পরিমান কিছুটা বাড়লেও করের হার কমে।
৭। বহুবিধ করঃ
যখন একটি দেশের জনসাধারনের উপর বিভিন্ন ভিত্তির উপর নির্ভর করে কর ধার্য করা হয় তখন তাকে বহুবিধ কর বলে। যেমন আয়ের উপর আয়কর, সম্পদের উপর সম্পদ কর, মূল্য সংযোজন কর, সম্পুরক কর প্রভৃতি। এছাড়াও ধনাত্মক কর, ঋণাত্নক কর, কেন্দ্রীয় কর, স্থানীয় কর প্রভৃতিও করের শ্রেনি বিভাগের আওতায় পড়ে।
🔳 প্রশ্ন-০৭ঃ কর ও ফি এর মধ্যে পার্থক্য লিখ।
কর ও ফি মধ্যে যে সকল পার্থক্য উল্লেখ্য যোগ্য তা নিম্নে আলোচনা করে হয়েছেঃ
পার্থক্যের | কর ( Tax ) | ফি ( Fee ) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | কর (Tax) হলো সরকারের কাছে নাগরিকদের অর্থ প্রদানের একটি বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা, এর মাধ্যমে সরকার দেশের উন্নতির জন্য নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। | সরকার একটি বিশেষ সেবা বা সুবিধা দানেরমাধ্যমে যে অর্থ আদায় করে তা ফি হিসেবে পরিচিত। যেমনঃ লাইসেন্স নবায়ণ ফি, কোর্ট ফি, রেজিষ্ট্রেশন ফি। |
পরিধি | করের পরিধি অনেক ব্যাপক। | ফি’র পরিধি খুব ছোট। |
সুবিধা | কর প্রদান করে করদাতা সরাসরি কোন সুবিধা পান না। | ফি প্রদান করে, সরাসরি এক বা একাধিক সুবিধা পাওয়া যায়। |
আবশ্যিক | কর প্রদান করা, বাধ্যতামূলক। | ফি বাধ্যতামূলক নয়, এটি নির্দিষ্ট্য সেবার জন্য প্রধান করতে হয়। |
উদাহরণ | আয়কর, ভ্যাট ইত্যাদি। | কোর্ট ফি,পাসপোর্ট ফি ইত্যাদি। |
🔳 প্রশ্ন-০৮ঃ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
প্রত্যক্ষ করঃ
যে কর দায় যার উপর ধার্য করা হয়, সে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই সরাসরি এই কর পরিশোধ করত হয় এবং তা অন্যের উপর সঞ্চালন করার সুযোগ থাকে না, তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে।
পরোক্ষ করঃ
যে কর দায় পরবর্তীতে অন্য বাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে বা সঞ্চালন করা যায়, তাকে পরোক্ষ কর বলে।
পার্থক্যের | প্রত্যক্ষ কর | পরোক্ষ কর |
---|---|---|
সংজ্ঞা | যে কর দায় যার উপর ধার্য করা হয়, সে ব্যাক্তিবা প্রতিষ্ঠানকেই সরাসরি এই কর পরিশোধ করত হয় এবং তা অন্যের উপর সঞ্চালন করারসুযোগ থাকে না, তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে। | যে কর দায় পরবর্তীতে অন্য বাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে বা সঞ্চালন করা যায়, তাকে পরোক্ষ কর বলে। |
কর নির্ণয় | প্রত্যক্ষ কর নির্ণয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। | এই ক্ষেত্রে নিয়ম অনুসরণ করতে হয়, কর নির্ধারন করা থাকে। |
আওতা | এই করের আওতায় সবাই আসবে না, কারণ নির্দিষ্ট পরিমান আয় থাকতে হবে। | এই করের আওতায় সবাই চলে আসে, কারণ নির্দিষ্ট পরিমান আয় লাগবে না। |
পরিশোধ | সরাসরি করদাতা কর পরিশোধ করেন। | করদাতার পক্ষে প্রতিনিধি বা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেন। |
উদাহরণ | আয়কর ও সম্পত্তির কর-ইত্যাদি। | ভ্যাট ও শুল্ক কর -ইত্যাদি। |
🔳 প্রশ্ন-০৯ঃ করঘাত ও করপাতের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
করঘাতঃ
পণ্য উৎপাদনকারি, ক্রয়-বিক্রয়কারি বা আমদানিকারক কর্তৃক প্রথমিক ভাবে পরিশোধিত করপরবর্তীতে ভোক্তা বা ব্যবকারকারী থেকে আদায় করেন, তাকে করঘাত বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে কর প্রদান করলেও পরবর্তীতে অন্যদের থেকে আদায় সম্ভব ।
করপাতঃ
কর সঞ্চালনের সর্বষেশ ধাপে, কর দায় যে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর ধার্য হয়, তাকে করপাত বলা হয়।এই ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবার ব্যবহারকারিকে সম্পূর্ণ কর দায় পরিশোধ করতে হয়।
করঘাত ও করপাতের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য পার্থক্য নিম্নে আলোচনা করে হয়েছেঃ
পার্থক্যের | করঘাত | করপাত |
---|---|---|
সংজ্ঞা | কর ধার্যেরপ্রাথমিক বা শুরুর দিকে, করের দায় যে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর ধার্য হয়, তাকে করঘাত বলা হয়। | কর সঞ্চালনের সর্বষেশ ধাপে, কর দায় যে ব্যাক্তিবা প্রতিষ্ঠানের উপর ধার্য হয়, তাকে করপাত বলা হয়। |
কর ধাপ | করের প্রথম বা শুরু ধাপ। | করের শেষ বা চূড়ান্ত ধাপ। |
করভার | এই করের ভার অন্যের উপর চাপানো যায়। | এই করের ভার অন্যের উপর চাপানো যায় না। |
আওতা | এই করের আওতা অনেক সীমিত। | এই করের আওতা অনেক ব্যাপক। |
প্রতিক্রিয়া | এই করের জন্য প্রাথমিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়। | এই করের চূড়ান্ত ব্যয় বৃদ্ধি পায়। |
সম্পর্ক | এটি একটি প্রত্যক্ষ কর। | এটি একটি পরোক্ষ কর। |
Related Video Course
-
🔷Taxation In Bangladesh বাংলাদেশে করবিধি ➡️ আয়বর্ষ ২০২৩-২০২৪ ➡️ করবর্ষ...